শাপলা
১।
বর্ষাকাল। আমাদের বাড়ির পুর্ব পাশের বিলটাতে এখন অনেক পানি। আমাদের বাড়িটা অতটা বড় না। দুইটা ঘড়। আমি আর আমার বাবা মা। আমার নাম আবির। ক্লাশ সেভেনে পড়ি। আমার একটা ছোট বোন আছে। নাম নীলা। বয়স মাত্র ৯ বছর। ক্লাশ থ্রীতে পড়ে।
একটা বিশেষ দরকারে বাবা কিছু বছর আগে একটা নৌকা কিনেছিল। বাবা সেটা এখন আর ব্যবহার করে না। তাই আমি আর আমার বোন নীলা দুজনে মিলে নৌকাটা পরিস্কার করে ঠিকঠাক করে সেটা পানিতে নামাই। বাড়ির পাশেই বিশাল ধানের জমি। কিন্তু জমিগুলোতে দুই হাত উচু পানি। ওদিকে তাকালে মনে হয়, একটা বিশাল বড় সাগর। অনেক দূড়ে কয়েকটা বাড়ি দেখা যায়। কয়েকজন লোক নৌকা নিয়ে কি যেন করছে। দেখতে অসাধারণ লাগে। বিশেষ করে সকালে। হালকা সুর্যের আলো পানিতে প্রতিফলিত হয়ে ঝিকমিক করে। আমি মাঝে মাঝেই পুর্ব পাশের জানালা খুলে সেই দৃশ্যটা দেখি।
আজকের আবহাওয়াটা সুন্দর। রোদ নেই। আকাশে হালকা হালকা মেঘ জমেছে। দূরে কোথাও যেন বৃষ্টি হচ্ছে। গর গর করে মেঘের আওয়াজ আসছে। নীলাকে বললাম, আয় নৌকা নিয়ে ঘুড়ে আসি। নীলা বলল, কোথায় যাবে ভাইয়া?
আমি আংগুল দিয়ে দেখিয়ে বললাম, ওইই... দুড়ে একটা মড়া গাছ দেখতে পাচ্চিস না? সেখানে যাব।
নীল যেন এই মূহুর্তটার জন্যই অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছিল। সাথে সাথেই সে রাজি হয়ে গেল। আমাকে বলল, যাবো ভাইয়া। এখনি যাবে?
- হ্যা রে।
- তারাতারি ফিরে আসতে হবে। নাহয় সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
দুজনে রওনা হলাম। নীলা সাঁতার জানে না। মা পই পই করে আমাকে বলে দিয়েছে, বোনকে দেখে রাখিস। ও কিন্তু সাঁতার জানে না। আমিও বলে দিয়েছি, সেটা নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।
আমি নৌকা চালাচ্ছি। বেশি ভালো চালাতে পারি না। মোটামুটি। আমাদের বাড়িটা অনেক পেছনে ফেলে রেখে এসেছি। নীলা বলল, কি করবে ভাই ওখানে গিয়ে?
- এমনি। তুই-ই তো যেতে চাস।
- ভাইয়া! ওই... দূরে ওগুলা শাপলা ফুলা না?
আমি ভালোমতন তাকিয়ে দেখলাম। হ্যা। ওগুলা শাপলা ফুল। কেন, তুই আনবি?
নীলার চোখদুটা চক চক করে উঠল। আমাকে বলল, হ্যা। ভাইয়া। আমাকে নিয়ে যাবে?
আমি বললাম, ওখানে গেলে তো ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে রে।
- হোক। তাও আমাকে নিয়ে যাও। তারাতারি চল।
অগত্যা একটু দ্রুতই যেতে লাগলাম। মনে করেছিলাম, কয়েকটা শাপলা ফুল এনেই আবার বাড়িতে চলে যাব। সন্ধ্যা হলে মা আবার দুজনকে বকবে। বাবা জানতে পারলে তো আমাদের এখানে আসতেই দিতো না। বাবাকে এসব কিছুই বলা যাবে না।
আনমনে দুজন কথা বলছি আর নৌকা চালাচ্ছিলাম। এমন সময় দক্ষিন দিকে গর গর করে মেঘের শব্দ হল। আমি সেদিকে তাকিয়ে দেখি অবস্থা খুব খারাপ। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই মনে হয় বৃষ্টি নেমে আসবে। আকাশটা ঘণ কুচকুকে কালো রঙ ধারণ করেছে। গায়ে ঠান্ডা বাতাস লাগছে। এই বৃষ্টি আসবেই। আমি নীলাকে বললাম, বোন রে! আজকে আর ওইখানে যাওয়া হবে না। বৃষ্টি এসে পরবে এক্ষনি। চল, বাড়ি চলে যাই। নীলা বলল, আরে বৃষ্টি আসুক। তাই কি হয়েছে। ভিজে ভিজে যাবো। অনেক সুন্দর হবে ভাইয়া।
- নারে। বৃষ্টির মধ্যে বিজলী চমকায়। যানিস না? সেদিন পাশের গ্রামে বিজলীতে একজন মানুষ মারা গেল? বৃষ্টির সময় এখানে থাকা ঠিক হবে না। আমরা বরং কালকে আসিরো।
সেদিন চলে আসলাম। মায়ের হাতে বকা খেলাম। একটুর জন্য বৃষ্টিতে গা ভেঁজেনি। আমরা বাড়িতে ফেরার সাথে সাথেই ঝপাঝপ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। জানালা দিয়ে বিলের দিকে অনেক্ষন তাকিয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছে বর্ষার পানিগুলো টগবগ করে ফুটছে। দুরের সবকিছু কুয়াশার মতো দেখা যাচ্ছে।
২।
পরদিন সকালে ঝলমলে রোদ উঠল আকাশে। আকাশের মেঘ অনেকটা কমেছে। আজকে রাতে অনেক বৃষ্টি হয়েছে। আকাশের সব পানি যেন জমিনে পড়ে গেছে। বেলা যত এগিয়ে যাচ্ছে, রোদের পরিমান তত বৃদ্বি পাচ্ছে। এই রোদের মধ্যে বাইরে যাওয়াটা অনেক কঠিন। স্কুল মাঠে পানি উঠেছে। স্কুল বন্ধ। সাথে খেলাধুলাও বন্ধ। বাড়িতে একা একা বসে পড়ছিলাম। ক্লাশের অনেকগুলা পড়া জমে আছে। এমন সময় নীলা এসে বলল, ভাইয়া। চলোনা। এখন বিলে যাই। গিয়ে কয়েকটা শাপলা তুলে আনি।
আমার মেজাজ গরম হয়ে গেল। রেগে নীলাকে বললাম, এই রোদের মধ্যে তুই বিলে যেতে চাস? পাগল হয়েছিস?
নীলা বলল, এখনি যাবো ভাইয়া।
- আমি পড়ছি, তুই দেখছিস না? অনেক পড়া জমা হয়ে আছে আমার।
- প্লিজ ভাইয়া। আজকে একবারই নিয়ে যাও না!
- রোদ কমুক। তারপর যাবো।
আমি আর নীলার সাথে কথা বললাম না। পড়ায় মনোযোগ দিলাম। আমি আর কথা বলছিনা দেখে নীলা রাগ করে আমার সামনে থেকে চলে গেলো। যাওয়ার আগে কি যেন একটা বলল। সেটার দিকে আমি কান দিলাম না। কথাটা বলেই হন হন করে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল নীলা।
আজকে সারাদিন নীলাকে দেখা গেল না। নিশ্চই খালার বাড়ি গেছে। এই মেয়েটার একটা খারাপ অভ্যাস আছে। একটু রাগ করলেই মেয়েটা খালার কাছে চলে যায়। যাবি তো যা। আমাদের সবাইকে জানিয়ে যা। তা না করে, গোপনে পালিয়ে যায়। পরে আবার নিয়ে আসতে হয়। খালার বাড়ি বেশি দূরে না। দু-মাইলের মতো পথ। গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা। যেতে কোন অসুবিধা হয় না।
বিকালের দিকে মা আমাকে বলল, যাতো... মেয়েটাকে তোর খালার বাড়ি থেকে নিয়ে আয়। আজকেও রাগ করে চলে গেছে। কতবার বলি, আমাদের একটু বলে যা। আমাদেরও একটু চিন্তা কম হয়। কে শোনে কার কথা।
কালকের মতোই আজকেও বিকালের আকাশটা কালো কুচকুচে হয়ে গেল। জোরে বাতাস বইতে লাগল। একটু সময়ের মধ্যেই বৃষ্টি নেমে পড়ল। সাথে কড় কড় করে বজ্রপাতের শব্দ। এই দুর্যোগ উপেক্ষা করে এখন খালার বাড়ি যাওয়াটা অসম্ভব। রাতের দিকেও বৃষ্টি থামল না। নীলাকে আর আনা হলো না।
পরদিন সকালে আমি খেয়াল করলাম, আমাদের নৌকাটা নেই। কালকে সারাদিনও নৌকার কাছে যাই নি। ভাবলাম, রাতের বেলা বাতাসে হয়তো নৌকা অনেক দূরে চলে গেছে। আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম, আশেপাশেও কোথাও নেই।
এখন আমি যাব নীলাকে আনতে। পাশের বাড়ির মিজান চাচাকে যাওয়ার সময় বললাম, আমাদের নৌকাটা একটু খুজে দিও তো। চাচা রাজি হলো।
গ্রামের রাস্তা পিছলা হয়ে গেছে। পথে কয়েকবার ফসকে গিয়েও আছাড় পড়লাম না। কোনরকম রাস্তা দিয়ে হেঁটে খালার বাড়ির দিকে যাচ্ছি। অবশেষে খালার বাড়ি গিয়ে পৌছালাম। খালার মুখ থেকে আমি যেই কথাটা শুনলাম, সেটা শুনে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। আমি যেন এখনি মাথা ঘুড়ে পরে যাব।
খালা আমাকে বলল," কই! নীলা তো কালকে আমাদের বাড়িতে আসেই নি"।
আমি খালাকে বললাম, তুমি মজা করছ তাই না?
- সত্যি বলছি রে। নীলা কালকে এখানে আসে নি। কেন, তোদের বাড়িতে নেই?
- না।
- বলিস কিরে। কোথায় গেলো মেয়েটা?
আমার বুক ধরফর করছে। নীলা কোথায় গেল তাহলে?
বাড়িতে চলে আসলাম। অনেক জায়গায় খোজা হল নীলাকে। তখন গ্রামে কারো কাছে মোবাইল ছিল না। দ্রুত যোগাযোগের কোন মাধ্যম নেই। খুজতে খুজতে সেদিন দুপুর হয়ে গেল। মা-বাবা দুজনেই কান্নাকাটি আরাম্ব করেছে। কোথায় হারিয়ে গেল মেয়েটা? পুরো গ্রাম জানাজানি হয়ে গেল। অনেক দূর পর্যন্ত খবর পাঠানো হল। কিন্তু কোনোভাবেই নীলাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমিও চিন্তায় পাগল হয়ে গেলাম। আমার মাথায় কিছু আসছে না। কোথায় খুজবো এখন আমি নীলাকে?
আমি যখন পাগল প্রায়। ঠিক সেই সময় মিজান চাচা খবর দিলেন, আমাদের নৌকাটা বিলের অনেক দুড়ে শাপলা ঝাড়ের ওইদিকে ছিলো। মিজান চাচা আমাদের নৌকাটা তার নৌকার পেছনে বেঁধে নিয়ে এসেছে।
আমি কিছুক্ষণ চিন্তা করলাম। হটাৎ করে পুরো বিষয়টা আমি বুঝতে পারলাম। আমি ধপাস করে মাটিতে বসে পরলাম। মিজান চাচা আমাকে ধরলেন। আমি মিজান চাচার দুটো হাত ধরে বললাম, চাচা। আমাদের নৌকাটা যেখানে পেয়েছ। সেখানে আমাকে সেখানে নিয়ে যাও তারাতারি।
মিজান চাচা যদিও ব্যাপারটা কিছুই বুঝতে পারে নি। কিন্তু আমি সব কিছু পরিস্কার বুঝতে পারছি। মিজান চাচা দ্রুত নৌকা চালাচ্ছে। যত শক্তি আছে তার। এগিয়ে যাচ্ছে সেই শাপলা ঝাড়ের দিকে। দুদিন আগেও এখানে এসেছিলাম। দক্ষিনে সেদিন এই আকাশটাই কালো হয়েছিল। আজকে সেখানে সাদা মেঘ।
অবশেষে চলে আসলাম সেই শাপলার ঝাড়ে। আমার চোখে দর দর করে পানি পড়ছে। সাথে সাথেই নৌকা থেকে লাফ দিলাম পানিতে। মিজান চাচা আমাকে দেখে অনেকটা অবাক হলেন। আমি গলা পর্যন্ত পানিতে শুধু আশেপাশে তকিয়ে দেখছি। আমি চিৎকার দিয়ে ডাকলাম, নীলা... নীলা... কোথায় গেলি তুই? নীলা... পানিতে ডুব দিলাম। পরিস্কার স্বচ্ছ পানি। পানির নিচে চোখ খোলা রাখা যায়।
সেদিন আমি পড়ার সময় যখন নীলা আমার কাছে শেষবার এসেছিল। তখন যাওয়ার আগে নীলা বলেছিলো, তোমার যেতে হবে না, আমি একাই যাবো।
সেই কথাটাই আমি সেদিন শুনেছিলাম না। পড়ায় অনেক ব্যাস্ত ছিলাম আমি। এখন আমার সেই কথাটা মনে পড়ল। তারমানে নীলা একা একা নৌকায় চড়ে শাপলা তুলতে এখানে এসেছিলো? নীলা তো সাঁতার জানে না। তারপর কি হয়েছে নীলার?
অনেক্ষন খোঁজার পরেও নীলার কোন উত্তর শুনতে পেলাম না। আমি আরো কয়েকবার পানির নিচে ডুব দিয়ে দেখলাম। কিন্তু বার বার ব্যার্থ হয়ে উপরে উঠে এলাম। আমি যেন পাগল হয়ে গেছি। পাগলের মতো খুজছি নীলাকে। আর চিৎকার করে ডাকছি, "নীলা... কোথায় গেলি বোন আমার। তুই বের হয়ে আয়। আমি জানি, তুই আমার সাথে লুকোচুড়ি খেলছিস। আমি কিন্তু এইবার সত্যি কান্না করবো।" কিন্তু না। তবুও নীলার কোন খবর পাওয়া গেল না।
হটাৎ আমি খেয়াল করলাম, আমার থেকে কয়েক হাত দূরে কয়েকটা শাপলার পাতা ঝোপের মতো হয়ে আছে। অনেক ঘণ জায়গা। আমি সেদিকে তাকিয়ে দেখি, একটা আংগুলের মতো কিছু বের হয়ে আছে।
হ্যা। সেটা আংগুলই। আংগুলের নখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দুদিন আগেই পিংক কালারের নেইলপালিশ দিয়েছে নীলা। এই নখের মধ্যেও পিংক কালারের নেইলপালিশ।
আমার আর চিনতে বাকি রইল না। কচুরিপানা আর শাপলা ফুলগুলোকে দুই সাইড করে আমি দ্রুত এগিয়ে যেতে আরাম্ব করলাম। পানাগুলা পরিস্কার করলাম। শুধু আংগুল নয়। একটা আস্ত হাত দেখা যাচ্ছে। আমি হাতটা টান দিতেই পুরো শরিরটা উপরে উঠে এলো। সাথে মাথাও।
আমার পৃথিবীটা সাথে সাথে অন্ধকার হয়ে গেল। আমি যেন আর কিছু দেখতে পারছি না। শুধু জোরে চিৎকার দিয়ে কেঁদে ফেললাম। গলা ফাঁটানো চিৎকার। নীলা... কেন এমনটা করলি...
আমার আর কিছু মনে নেই। হয়তো পানিতে থাকা অবস্থাতেই অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম।
৩।
আমার যখন জ্ঞান আসল। তখন আমি দেখলাম, আমি বিছানায় শুয়ে আছি। আমার আশেপাশে অনেক মানুষ। আমার সাথে কি হয়েছে কিছুই মনে করতে পারছি না। আস্তে আস্তে সবগুলো ঘটনা মনে আসতে লাগল। আমার মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হল, নীলা কোথায়?
বিছানা থেকে উঠে পরলাম লাফ দিয়ে। সাথে সাথে দৌড়ে গেলাম বাইরে। বাইরে গিয়ে দেখলাম, সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটা লাশ। ছোট্ট লাশ। আমার বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ করছে। যেতে সাহস পাচ্ছি না। আশেপাশে অনেক মানুষ। মায়ের হালকা কান্নার শব্দ কানে আসছে। কয়েকজন মিলে কোথাও যেন গুন গুন করে কোরআন তেলাওয়াত করছে।
আমি লাশের পাশে গেলাম। লাশের ডান পাশে মিজান চাচা চেয়ার পেতে বসেছে। আমাকে দেখে মিজান চাচা লাশের মুখটা খুলে দিল।
আমি দেখলাম নীলা চুপ করে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। নীলার চেহাড়াটা আগের চেয়ে অনেক ফর্সা দেখা যাচ্ছে। এটাই তো নীলার ইচ্ছা ছিল। মরার পরে ওর সপ্নটা যেন পূরন হয়েছে।
আমি লাশের খাটিয়া ধরে অঝোরে কান্না শুরু করে দিলাম। আমার জীবন থেকে যেন আজ সবকিছু হাড়িয়ে গেল। আমি নিজেকে হাড়ালেও হয়তো এতোটা কান্না করতাম না।
৪। অনেক বছর পরঃ
আমি বড় হয়ে গেছি। লেখাপড়ার জন্য ঢাকা চলে এসেছি। নীলাকে প্রায় ভুলেই গেছিলাম। কিন্তু আজকে একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখে আমার নীলার কথা মনে পড়ে গেল। মেয়েটা আমার ছাত্রী। বাসায় গিয়ে টিউশনি করাবো। আজকেই প্রথম দিন। ক্লাশ থ্রীতে পড়ে। নীলার মতোই চেহাড়া। কাঁধ পর্যন্ত চুল। শুধু একটু বেশি ফর্সা।
মেয়েটাকে দেখে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। তারপর মেয়েটা বলল, কি হলো ভাইয়া। কান্না করছ কেন?
আমার নিশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছিল। আমি আর পারছিনা। সেদিন মেয়েটাকে আর পড়াতে পারি নি। বাসায় চলে আসি। বিছানায় অনেক্ষন কান্না করি। মেয়েটা আমাকে ভাইয়া ডেকেছে। নীলার মতো।
পরদিন মেয়েটাকে পড়াতে যাওয়ার সময় পিংক কালারের একটা নেইলপালিশ কিনি। ভাবছি ওকে গিফট দেব।
মেয়েটা সেই নেইলপালিশটা পেয়ে অনেক খুশি হয়ে বলল, এটা আমার জন্য?
আমি বললম, হ্যা। তোমাকে এটা দিলে অনেক সুন্দর দেখা যাবে।
মেয়েটা মন খারাপ করে বলল, কিন্তু ভাইয়া জানো! আমি নেইলপালিশ দিতে পারি না। মাখামাখা হয়ে যায়। তুমি আমাকে দিয়ে দিবে?
আমি বললাম, কেন নয়? আমি খুব সুন্দর করে দিতে পারি। তাহলে কাছে এসে বস। আমি দিয়ে দিচ্ছি।
আমার মনে হচ্ছে, আমি যেন আমার সেই হাড়িয়ে ফেলা বোনকে আবার খুজে পেয়েছি।
- মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল
Comments
Post a Comment