ছাগল


তমার মা ছোটবেলায় মারা যায় কলেরায়। সেই থেকে তমাকে আদরযত্ন করে তার দাদী। দাদী মানুষটা খুব ভালো। তমার দাদা মারা যাওয়ার সময় তার দাদীকে নাকি বলেছিলো, আমার মেয়েডারে আল্লায় নিয়া গেছে। কিন্তু আমার নাতনীডা তো আছে। তুই আমার নাতনীডারে দেইখা রাখবি। অর কিছু হইতে দিবি না।

সেই থেকে তমার দাদী তমাকে প্রচুর পরিমান ভালোবাসে। তমা বয়সে এখন সবে এগারো। দাদীর একমাত্র নয়নের মণি হচ্ছে তমা। সে স্কুলে গেলে টিফিনের সব রান্নাবান্না দাদী-ই করে। তমাকে বলতে গেলে চুলায় হাতই লাগাতে দেয় না। মাঝে মাঝে তমা তাই বলে,

- এখন রান্নাবান্না না শিখলে জামাই বাড়ি গিয়ে রান্না করবো কিভাবে?

- হ...। এখন রান্না কইরা চেহাড়াডা কালা বানাও। তহন জামাইয়ে পছন্দই করবে না। তহন খুব ভালা হবো। তরে রান্না শিখানো লাগবে না। তুই একাই পারবি।

আসলেও তমা রান্না করতে পারে ভালোই। সে বছর তমার দাদীর জ্বর আসলে তমাই রান্না করে খিলিয়েছে দাদীকে। দাদী অনেক রাগ করলেও তমা সেটা উপেক্ষা করে রান্না করতে চলে গেল চুলায়।


সেদিন বিকেলে তমার দাদী রান্না করছিলো চুলায়। তমার স্কুল কেবল ছুটি হল। বাইরে বাতাস। কিছুক্ষনের মধ্যেই মনে হয় বৃষ্টি নামবে। আস্তে আস্তে পরিবেশটা অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। তমার দাদী তমাকে বলল, পুবের ক্ষেতে ছাগলডা বাইন্দা রাইখা আইছি। ছাগলডা একটু নিয়ায়। বৃষ্টি নামবো মনে হয় হারা রাইতের নামে।


তমা ব্যাগটা রেখে ছাগল আনতে গেল। ক্ষেতে প্রচুর বাতাস। মনে হচ্ছে তমা এখনি উড়ে কোথাও ছিটকে পড়ে যাবে। পরিবেশটা আরো অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনি বেলা ডুবে যাবে। ক্ষেতের আশেপাশে কোন মানুষের চিহ্ন নেই। আশেপাশে কারো গরুছাগল দেখা যাচ্ছে না। সবারটাই সবাই যার যার বাড়িতে নিয়ে গেছে। তমা এদিক ওদিক তাকিয়েও কোন ছাগলের দেখা পেল না। এই অন্ধকার পরিবেশে তমা কোথায় খুঁজবে ছাগলকে?

হঠাৎ তমা খেয়াল করল, সামনে একটা ছাগলের ডাক শোনা যাচ্ছে। ছাগলটা চিৎকার করছে। তমা আর এক মুহুর্তের জন্যও সেখানে দাঁড়াল না। ছাগলের ডাকের উৎসের দিকে দৌড় দিলো। তমা খেয়াল করলো, অনেক দূরে ছাগলটা দেখা যাচ্ছে। তমা দৌড়াচ্ছে। আরো দৌড়াচ্ছে। অনেক্ষানি যাওয়ার পর তমা একটা জিনিস খেয়াল করল, সে যতই দৌড়াচ্ছে ছাগলটাও আরো দৌড়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। থামার কোন লক্ষনই যেন নেই। বাতাসের যে অবস্থা, এতে ছাগলটা এরকম পাগলের মতো দৌড়ানোটাই স্বাভাবিক।


সামনে একটা খাল। খালে এখন একটু একটু পানি আছে। তমা আরো সামনের দিকে এগিয়ে গেল। খালের সামনে এসে ছাগলটা কিছুক্ষন স্থির হয়ে রইল। তমা যখন ছাগলটার আরো কাছে গেল। তখন ঘটল একটা আজব ঘটনা। ছাগল এমনিতে পানিকে ভয় পায়। হাজারবার চেষ্টা করেও যেই ছাগলকে পানিতে নামানো যায় না। সেই ছাগলটা লাফ দিয়ে খালের পানিতে নেমে পড়ল।


এরপর তমা যা দেখল সেটা দেখে সে এক মুহুর্তের জন্যও সেখানে দাঁড়াল না। খালের পাড় থেকে উঠে সোজা বাড়ির দিকে দৌড়ানো আরাম্ব করল। কোন দোয়া দরুদ মনে পরছে না। অন্ধকার কিছুটা কমে এসেছে। আকাশ একটু একটু পরিস্কার হচ্ছে। বাড়ি গিয়ে তমা ধপাস করে সিরিতে বসে পড়ল। তমাকে হাঁপিয়ে আসতে দেখে তার দাদী এগিয়ে এসে বলল, কিরে! অবা হাঁপাইতাছত ক্যা? কি হইছে? কি দেখছত?

তমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। দাদী এক গ্লাস পানি এনে দিলে তমা সেটা পুরোটাই খেল। তারপর দেখল, আম গাছের সাথে তাদের ছাগলটা বাঁধা।

তমা অবাক হয়ে বলল, দাদী! ছাগল? ছাগলটা কখন আসল?

- তুই যাওয়ার আগেই একাই বাইত্তে ছুইটা আইছে। আমি খেয়াল করি নাই। তুই যাওয়ার পরেই দেহি, ছাগলটা ঘড়ে ভুসি খাইতাছে।

তমা কিছুক্ষন চোখ বড় বড় করে ছাগলটার দিকে তাকিয়ে রইল। দাদী জিজ্ঞাস করল, তুই অবা হাঁপাইয়া আইছত ক্যা কইলি না তো? সে দাদীকে সব ঘটনা খুলে বলল। সেইটা শুনে দাদী কিছুক্ষন থ হয়ে রইল।


ছাগলটা যখন খালে নামল তমা তখন খালের পাড়ে। তমাও ছাগলের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছিল। ছাগলটা হটাৎ করে তমার দিকে ঘুড়ে দাঁড়াল এবং তার সামনের দুই পা দিয়ে তমাকে পানি ছিটিয়ে দেওয়া আরাম্ব করল। তমা আরেকটু পিছিয়ে যেতেই খেয়াল করল, ছাগলটা তার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে খিল খিল করে হাঁসছে। সেটা দেখে তমার আর মাথা ঠিক ছিল না। এক দৌড়ে চলে আসে বাড়িতে।


মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল

২৮শে মার্চ ২০২৪

Comments

Popular Posts