কুপিত পিশাচ

 

সাদিয়ার বান্ধবীরা একেকটা ভিতুর ডিম। নানান এলাকার নানান গল্প শুনে সেই গল্পকে বাস্তব মনে করে ভয় পায়। যেমন এই সেদিন একটা গল্প শুনল, তাদের স্কুলে যাওয়ার পথের বটগাছটাতে নাকি একটা বাচ্চা মেয়ে ফাঁস লাগিয়ে মারা গেছে। এবং সেই মেয়ের আত্মাটা নাকি এখনো সেখান দিয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং অনেক মানুষকে ভয় দেখায়। সেই থেকে সাদিয়ার বান্ধবীরা সেই বটগাছের পাশ দিয়ে যায় না। গেলেও দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে যায়। সাদিয়া এসব দেখে খিল খিল করে হাঁসে। আর বলে, তোদের কতবার করে বলবো ভূত বলে কিছু নেই, তবুও কেন যে ভয় পাস।

তিন্নি, মৌ, জয়া, সাদিয়া, এরা চার বান্ধবী। কেবল ক্লাস সিক্সে পড়ে। চারজনে নাচতে নাচতে স্কুলে যায়। আবার গাইতে গাইতে স্কুল থেকে ফিরে আসে। শৈশব যে কতোটা রঙিন হতে পারে এই চারজনকে দেখলে সেটা বোঝা যায়।
মেয়েগুলোর মধ্যে থেকে সাদিয়া একটু বড় এবং বুদ্ধিমতী। আর বাকি তিনজন একটু বোকা স্বভাবের।

সেদিন স্কুলের টিফিনের সময় একটা আলোচনা সবার কানে শোনা যেতে লাগল। আলোচনাটা এইরকম,
তাদের স্কুল থেকে অনেক দূরে পুরনো একটা ফ্যাক্টরি আছে। সেটা অনেক আগে চালু ছিল। কোন একটা কারণে এখন সেটা পরিত্যক্ত হয়ে আছে। ইদানীং কয়েকজন লোক একটা আজব জিনিস খেয়াল করছে। ফ্যাক্টরির পাশের জমিগুলোতে মনে হচ্ছে কোন অদৃশ্য অবয়ব ঘুরে বেড়ায়।
অবয়ব-গুলে যেদিকে যায় সেদিকে ছোটখাটো একটা টর্নেডোর মতো ঝড়ের সৃষ্টি হয়। জমিতে পরে থাকে খড়গুলো ঘুরপাক খেতে খেতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যায়। অবশ্যই এর পেছনে কোন একটা অদৃশ্য কিছুর হাত আছে।

তিন্নির দাদি অনেক ভূতের গল্প জানে। উনার গল্প শুনে মাঝে মাঝে রাতে ঘুম হয় না। সে কি ভয়। গা হিম হয়ে আসে।
তিন্নি তার দাদির কাছে সেই অদৃশ্য অবয়বটার কথা জিজ্ঞাস করল। তার দাদি ঘটনাগুলো শুনে চিন্তাভাবনা করে বলল, ওইটারে কুপিত-পিশাচ কয়। পিশাচটা বাতাসের মতো। বাতাসে ভাইসা বেড়ায়। কোনদিন কাউরে ভয় দেখায় না। তয় মানুষের অমঙ্গল করে। মানুষের গায়েবি ক্ষতি করে। কোনদিন অই পিশাচের সামনে পরলে বেশি কইরা আস্তাগফিরুল্লাহ পড়বি। নাহইলে কিন্তু এমন ক্ষতি কইরা দিবো, সারাজীবনেও তার মাশুল দিতে পারবি না।
কথাগুলো শুনে তিন্নির গলা শুকিয়ে যায়। তার মানে কি ফ্যাক্টরির পাশের জমিগুলোতে অই কুপিত-পিশাচেরা ঘুরে বেড়ায়?

চার বান্ধবী চিন্তা করল একদিন তারা সেই পরিত্যক্ত ফ্যাক্টরিটার কাছে যাবে। ব্যাপারটা তাদের পরিবারের কাউকেই জানানো হবে না। তাদের লিডার সাদিয়া। সাদিয়া দেখতে চায় সেই কুপিত-পিশাচটাকে। তিন্নি, মৌ আর জয়ার যাওয়ার ইচ্ছা আছে। কিন্তু শর্ত হলো, কেউ কাউকে ছেরে যেতে পারবে না। সবাইকে একসাথে থাকতে হবে। যাতে পিশাচটা কাউকে আক্রমণ করতে না পারে।

একদিন দুপুরবেলা চারজন মিলে রওনা হল সেই ফ্যাক্টরিটার ওইখানে। আশেপাশে ধু ধু পতিত জমি। কোন গাছপালা নেই। জমিগুলাতেও বিগত কয়েক বছর ধরে চাষাবাদ হয় না। উত্তর দিকে তাকালে দেখা যায় বিশাল বড় দেয়াল। দেয়ালের অপর পাশে ফ্যাক্টরি। দেয়ালের দৃষ্টি টপকে কয়েকটা কন্টেইনারের দেখা পাওয়া যায়।

তাদের আরো এগিয়ে যেতে হবে। আরো আধ-মাইল পরেই সেই দেয়ালের কাছে যাওয়া যাবে। এবং দেয়ালের পাশের জমিগুলোতেই নাকি কুপিত-পিশাচেরা ঘুরে বেড়ায়। তিন্নির ভয় পাওয়া আরাম্ব করে দিল। কারণ সূর্য ক্রমাগতই পশ্চিম দিকে হেলে যাচ্ছে। সূর্যের আলোর তেজ ক্রমাগত কমে আসছে। সূর্যের আলো দূরে থাকা ফ্যাক্টরির সেই কন্টেইনারের উপর পতিত হয়ে এক বিচিত্র রঙের সৃষ্টি করছে।
যদিও তিন্নি ভয় পাচ্ছে তবুও তার মধ্যে পিশাচটাকে দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা কাজ করছে।

সাদিয়া মেয়েটা কেন জানি এসব অলৌকিক কিছু বিশ্বাস করতে চায় না। তার ধারণা, যেই জিনিস আমরা নিজের চোখে দেখিনি, সেই জিনিস আবার আমাদের ভয় দেখায় কিভাবে?
সাদিয়া ভূতের গল্প পড়ে। দেখে মনে হয়, কোন কমেডি গল্প পড়ছে।
সেদিন সাদিয়া একটা গল্প পড়ে খিল খিল করে অনেক্ষন হাসল। কারণ, শাঁকচুন্নিরা নাকি মানুষের রক্ত চুষে খায়। তাহলে ওরা টয়লেট করে কোথায়? আবার, তাদের গায়ে যে কাপড় থাকে, অগুলা কোন মার্কেট থেকে কিনে? ওদের কি আলাদা কোন দোকানপাট আছে?
এই প্রশ্নের কোন উত্তর সাদিয়ার বান্ধবীরা দিতে পারে না।

চার বান্ধবীর মধ্যে সবকিছুতে মিল থাকলেও অমিলটা শুধুমাত্র এইখানেই। সাদিয়া ভূতে বিশ্বাস করে না। এই কারণেই সাদিয়ার সাথে দ্বন্দ্ব হয় অনেকবার।
মৌ মাঝে মাঝে বলে, যেদিন গেছো ভূতের সামনে পড়বি, তখন বুঝবি কেমন লাগে। সেদিন আমার দাদীর সামনে পড়েছিলো। সারা বেলা অজ্ঞান হয়েছিলো।
সাদিয়া বলে, ডাকিস তোর গেছো আংকেলকে। দেখি কিভাবে ভয় দেখায়।
সাদিয়ার কথা শুনে মৌ-য়ের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সাদিয়া কোনভাবেই বিশ্বাস করতে চায় না ভূত বলে কিছু আছে। কিন্তু ভূত আসলেই আছে। তা না হলে সেদিন রুমা নামের শান্তশিষ্ট মেয়েটা ওইরকম পাগলের মতো ব্যাবহার করলো কেন? আর অইভাবে মানুষকে বিশ্রীভাবে গালি দিল কেন? ভুতটাকে বোতল বন্দি করার পর রুমা মেয়েটা দিব্বি ভালো হয়ে গেল, যেন কিছুই হয় নি, সবকিছু স্বাভাবিক। ভূত ছাড়া আর কে এমন করতে পারে?

এতক্ষণে চারজন ফ্যাক্টরির কাছেই চলে এসেছে। সূর্যের আলোর আভা একটু একটু দেখা যায়। এখন গ্রীষ্মকাল। দক্ষিণের আকাশে একটু একটু মেঘের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। বৃষ্টি হবে কি? হতেও পারে।
আশেপাশে সবকিছু স্তব্ধ। কোন মানুষের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। ফ্যাক্টরির অপর পাশে একটা রাস্তা আছে। মাঝে মাঝে কয়েকটা বাস-ট্রাক ছুটে যায়। কিন্তু এই মুহূর্তে তাও নেই। জমিগুলোতে ঘাস জন্মেছে প্রচুর। মাঝে মাঝে লোকেরা এখানে এসে বস্তা বোঝাই করে ঘাস কেটে নিয়ে যায়।

আধা ঘণ্টা বসে থাকার পরেও কোন ধরনের অলৌকিক কিছু লক্ষ করল না তারা। এদিকে বেলা গড়িয়ে আসছে। দক্ষিণের আকাশে থাকা মেঘরাশিগুলো ক্রমাগতই উত্তরের দিকে এগিয়ে আসছে। বৃষ্টিও নামতে পারে। কিন্তু এখনো তারা সেই কুপিত-পিশাচের দেখা পেল না।
সাদিয়া বিরক্ত হয়ে বলল, পিশাচটা কি আমাদের দেখে ভয় পেল নাকি রে?
বাকি তিনজনের মুখে কোন কথা নেই। কোথায় গেল পিশাচটা? এখান দিয়েই তো ঘোরাঘুরি করে। 

আর কিছুক্ষণ থাকার পরে চারজন সত্যিই অনেক বিরক্ত হয়ে গেল। আজকে মনে হয় ওইটার দেখা পাওয়া যাবে না। মন খারাপ করে চারজন চলে যেতে আরাম্ব করল। কিন্তু যেতে গিয়েও থেমে যেতে হল তাদের। তারা লক্ষ করল বাতাস আরাম্ব হয়েছে। রাশি রাশি মেঘ দক্ষিণ দিক থেকে উড়ে আসতে লাগল। বৃষ্টি নামবে হয়তো। দৌড় দিতে গিয়েও দৌড় দিল না কেউ। কারণ, তাদের ঠিক পেছনে কুপিত-পিশাচটা। চারজনে পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখল, প্রবল একটা ঘূর্ণিবায়ু সবকিছু ঘুড়িয়ে উপরের দিকে তুলে নিচ্ছে। মরা খড়কুটাগুলো সেই ঘূর্ণনের ফলে উপরের দিকে উঠে গিয়ে অন্য জায়গায় ছিটকে পড়ছে।

তিন্নি চিৎকার দিয়ে উঠল। সাদিয়া বাদে বাকি তিনজনে সরে গেল। সাদিয়া পেছন দিয়ে তাকিয়ে দেখল তার বান্ধবীরা সব দৌড়ে অনেক দূরে চলে গেছে। সাদিয়া তার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল, ঘূর্ণিবায়ুটা তার পায়ের খুব কাছেই। এটাকেই বলে কুপিত-পিশাচ?
সাদিয়া কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কিছু একটা চিন্তা করল। তারপর তিনজনকে ডাক দিয়ে বলল, তোরা একটা আস্ত গাধা। এই সামান্য জিনিসকে তোরা এতোটা ভয় পেলি? তোরা যেটাকে পিশাচ বলে ভয় পাচ্ছিস আদতে সেটা কিছুই না।

কিছুক্ষণের মধ্যে আবার বাতাস কমে আসলো। তখন পিশাচটাও গায়েব হয়ে গেল। তিন্নিরা যেন এইবার একটু সাহস পেল। তিনজন সাদিয়ার কাছে যাওয়ার পর সাদিয়া ব্যাপারটা সবাইকে খুলে বলল,
আলো যেরকম প্রতিফলিত হয় ঠিক সেরকমভাবে বাতাস-ও দেয়ালে প্রতিফলিত হয়। দক্ষিণ দিক থেকে আসা বাতাস ফ্যাক্টরির দেয়ালে লেগে প্রতিফলিত হয়ে আবার বিপরীত দিকে ফিরে আসে। এই বাতাসটা আপতিত হওয়া আর প্রতিফলিত হওয়ার মাঝাখানের স্থানটুকুতে একটা ঘূর্ণন বলের সৃষ্টি হয়। আর সেটাকেই তোরা পিশাচ বলে ঘুরে বেড়াচ্ছিস। কতবার তোদের বলি, এসব ভূতের গল্প বাদ দিয়ে বেশি বেশি বিজ্ঞান বই পড়বি। তাহলে বুঝতি এসব হওয়ার কারণ।

তিন্নি বলল, তাহলে আমার দাদু যে সেদিন বলল, এইটারে কুপিত-পিশাচ বলে, ওইটা কোন সাধারণ জিনিস না। তাহলে কি এগুলা সব মিথ্যা?
সাদিয়া বলল, তোর দাদু কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়েছে শুনি?
- ক খ বলতে পারে। কিন্তু কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়েছে সেটা যানি না।
- বিজ্ঞানের ব পর্যন্ত মনে হয় তোর দাদু পড়তে পারে নি। তাই হয়তো বিষয়টা জানে না।
তিন্নিসহ বাকি দুজনের মুখমণ্ডল চুপসে গেল। সাদিয়া বলল, যাকগে। এখানে এসে যে এক্কেবারেই লস হয়েছে তা মোটেই না। এমন একটা সুন্দর পরিবেশ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

সেদিন সাদিয়ারা চলে আসল। তিন্নিসহ সবাই বিষয়টা বুঝতে পারল। আসলে এতক্ষণ যাকে তারা ভয় পাচ্ছিল আসলে সেটা আদৌ কিছুই না। কালকে স্কুলে গিয়ে সবাইকে বিষয়টা বলতে হবে। বিশেষ করে তিন্নির দাদীকে। তিনি যদিও বাতাসের প্রতিফলন জিনিসটা বুঝতে পারবেন কিনা সেটা কেউ জানে না। কিন্তু বলতে হবে, ওইসব পিশাচ টিশাচ বলে কিছু হয় না।

এই ঘটনার পর আরো দুই দিন পার হয়ে গেল। এই দুই দিনে সেই কুপিত-পিশাচ নিয়ে কোন ধরনের কথাবার্তা হলো না। কিন্তু তার পরের দিনগুলো থেকে ঘটনাগুলো পুরোটাই বদলে যেতে লাগল। স্কুলে একদিন মৌ আর জয়া আর সাদিয়া একই বেঞ্চে বসেছে। সবকিছু ঠিকভাবেই চলছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে কিছুক্ষণ পর সাদিয়া বলল, আমার খুব খারাপ লাগছে রে। প্রচণ্ড মাথা ঘুড়াচ্ছে। জয়া বলল, পানি খা, ঠিক হয়ে যাবে। সাদিয়া পানি খেয়ে বেঞ্চে মাথা রেখে কিছুক্ষণ শুয়ে রইলো। কিন্তু মাথার যন্ত্রণা কোনভাবেই কমছে না।
সাদিয়া দৌড়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল। সাদিয়ার পেছনে মৌ আর জয়াও গেল। সাদিয়া ওয়াশরুমে গিয়ে হর হর করে বেসিনে বমি করে দিল।
সেদিন সাদিয়া আর ক্লাস করতে পারল না। বাসায় চলে আসল। জয়া-ই বাড়িতে পৌঁছে দিলো। জয়ার বাসা সাদিয়ার বাসার কাছেই। সাদিয়া পথ দিয়ে আসার সময় বার বার বলছিলো, আমার অনেক মাথা ব্যথা করছে রে। জয়া বলল, সারাক্ষণ বইয়ের পিচ্চি পিচ্চি লেখার দিকে তাকিয়ে থাকিস। তাই তো মাথা ব্যথা করে। চোখের সাথে মাথার কানেকশন আছে। কিছুদিন বই পড়া কমিয়ে আমাদের সাথে খেলাধুলায় সময় কাঁটা। এসব মাথা ব্যথা কিচ্ছু থাকবে না। বুঝলি।
জয়ার কথাগুলো সাদিয়া চুপ করে শুনছিলো। ওর কথাগুলো সত্যও হতে পারে। ইদানীং সাদিয়া বইও পরছে প্রচুর। চোখের পাওয়ার আসতে পারে। কিন্তু তবুও সাদিয়া কেন জানি একটু একটু ভয় পাচ্ছে। মনে হচ্ছে, একটা খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে তার সাথে। হটাৎ করে এমন ধারণা করার কারণটা পুরোই অমূলক। কিন্তু তবুও সাদিয়া ভয় পাচ্ছে। বুকটা ধড়ফড় করছে।

বিকালে সাদিয়া ডাক্তারের কাছে গেল। ডাক্তার বলল, মাথায় প্রচুর প্রেশার। কিছুদিন রেস্ট নিতে হবে। রেস্ট নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু সব ঠিক হওয়ার কথা হলেও কিছুই সে রাতে ঠিক হল না৷ রাতের বেলা সাদিয়ার বমির পরিমান বাড়তে লাগল। একসময় বমির সাথে রক্ত পরা আরাম্ব করল। টকটকে লাল রক্ত। সাদিয়ার ফ্যামিলির সবাই প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে। সাদিয়ার এরকম হওয়ার পেছনে কোন কারণ কেউ খুঁজে পাচ্ছে না। আগেও সাদিয়ার এরকম কখনোই হয় নি।

সে রাতে সাদিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হল। স্যালাইন দেওয়া হল। মাথার যন্ত্রণায় সাদিয়া পাগলের মতো করতে লাগল। বাবা-মা দুজনে শান্ত করার চেষ্টা করেও কোন লাভ হল না। একসময় ডাক্তার বাধ্য হয়েই ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে রাখল।
যতক্ষন অজ্ঞান থাকে ততক্ষন ভালোই থাকে। কিন্তু জ্ঞান ফিরে আসার পর আবার একই অবস্থা। অবস্থা কোনভাবেই ভালোর দিকে যাচ্ছে না। এখনো বমির সাথে তাজা রক্ত আসছে। ডাক্তার বলেছে, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে যদি রক্ত পরা না বন্ধ হয়, তাহলে রক্ত দেওয়া লাগবে।

এভাবে আরো তিন দিন পার হয়ে গেল। সাদিয়ার অবস্থার একটুও উন্নতি হল না। রক্ত দেওয়া হয়েছিলো। ডাক্তার বলেছে পেটে একটা ক্ষত হয়েছে। সেখান থেকে রক্ত আসছে। অপারেশন করা লাগতে পারে। আর মাথা ব্যাথার কারণ এখনো জানা যায় নি। অবস্থা খুব ক্রিটিকাল। মাঝে মাঝে পাগলের মতো ব্যাবহার করে এখন। আবোলতাবোল বলে।

কিন্তু শেষ রক্ষা হল না৷ পরদিন শেষরাতে সাদিয়া মাথার যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মারা গেল। মৃত্যুটা মোটেও স্বাভাবিক ছিল না। মরার সময় সাদিয়ার ছটফটানি-টা অনেকেই দেখে ভয় পেয়েছে। গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। মুখ দিয়া গর গর আওয়াজ হচ্ছিল। হাত পা কুচকে যাচ্ছিল। সাদিয়ার মা এসব দেখে সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়েছিল।

তিন্নি, মৌ আর জয়া সাদিয়ার মৃত্যুর খবরটা যেন কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না। এরকম একটা সাহসী মেয়ে। কয়দিন আগেও চুলের বেণী দুলিয়ে ওদের সাথে খেলাধুলা করল। সেই হাসিখুশি মেয়েটা নাকি আজকে মরে গেল।

সাদিয়াকে যেদিন দাফন করা হচ্ছিল, সেদিন আবার সেই ঘুর্ণিবায়ুটা আশেপাশে ঘুরছিলো। মাটিতে পরে থাকা পাতাগুলো ঘুড়তে ঘুড়তে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছিল। ব্যাপারটা কেউ খেয়াল না করলেও তিন্নি খেয়াল করল। কুপিত-পিশাচ। কই... আশেপাশে তো কোথাও কোন দেয়াল নেই। আবার বাতাসও তো নেই খুব একটা। তখনি হটাৎ তিন্নির দাদীর সেই পুরোনো কথা মনে পড়ে গেল, 
“ওইটারে কুপিত-পিশাচ কয়। পিশাচটা বাতাসের মতো। বাতাসে ভাইসা বেড়ায়। কোনদিন কাউরে ভয় দেখায় না। তয় মানুষের অমঙ্গল করে। মানুষের গায়েবি ক্ষতি করে।”

মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল
১৪ই মার্চ ২০২৪

Comments

Popular Posts